করোনাভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) কি?
কোভিড-১৯ হলো করোনাভাইরাসের এক নতুন প্রজাতি। করোনাভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট এই রোগটি প্রথম চীনের উহানে চিহ্নিত হয়েছিল। তখন থেকেই রোগটির নাম করা হয়েছিল করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯)। করোনা থেকে ‘কো’, ভাইরাস থেকে ‘ভি’, এবং ‘ডিজিজ’ বা ‘রোগ’ থেকে ‘ডি’ নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয়। আগে, এই রোগকে ‘২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস’ বা ‘২০১৯-এনসিওভি’ বলা হতো। কোভিড-১৯ হলো একটি নতুন ভাইরাস যা অতীতের সার্স ভাইরাস এবং কয়েক ধরনের সাধারণ সর্দি-জ্বর জাতীয় ভাইরাসের পরিবারভুক্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড ১৯-কে মহামারী হিসাবে উল্লেখ করেছে। এর অর্থ কি?

কোভিড-১৯-কে মহামারী হিসাবে চিহ্নিত করার অর্থ এই নয় যে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা বেড়েছে। মূলত এর ভৌগলিক বিস্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ একে মহামারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেহেতু কোভিড-১৯ ভাইরাসটি যে কোন দেশে এবং যে কোন সম্প্রদায়ের শিশু ও পরিবারের মধ্যে বিস্তার লাভ করতে পারে, সেহেতু ইউনিসেফ এর প্রশমনে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করছে। পরিবার ও শিশুদের এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে ইউনিসেফ বিভিন্ন দেশের সরকার ও সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

ভাইরাসটি সম্পর্কে অনলাইনে প্রচুর তথ্য। এক্ষেত্রে আমার কি করনীয়?

কোভিড-১৯সহ করোনাভাইরাস কিভাবে ছড়ায়, এর থেকে নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখতে হয় এবং এই ভাইরাস হয়েছে ধারণা করলে কি কি করনীয় ইত্যাদি বিষয়ে অনলাইনে প্রচুর ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্কতা খুবই জরুরী এবং এই বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য কোথায় পাবেন তা জেনে নেয়া উচিৎ। এখানে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে আপনি সংক্রমনের ঝুঁকি কমাবেন, আপনার সন্তানকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনা প্রয়োজন কিনা, সন্তানসম্ভবা মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ কিনা, এবং ভ্রমনের সময়ে আপনার কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। ইউনিসেফ একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করেছে যেখানে আপনি কোভিড ১৯ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত নির্দেশনা ও তথ্য পাবেন। এছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও একটি কার্যকরী শাখা আছে যেখানে এ সম্পর্কিত বহুল জানতে চাওয়া প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। ভ্রমন, শিক্ষা ও অন্যান্য নির্দেশনার জন্য বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সুপারিশ ও তথ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

কোভিড-১৯ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?

সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের ফোঁটার (কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে তৈরী) সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাস দ্বারা দূষিত অংশ স্পর্শ করার মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশ কয়েক ঘন্টা ভূপৃষ্ঠে বেঁচে থাকতে পারে, তবে সাধারণ জীবাণুনাশক এটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম।

করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো কী?

করোনভাইরাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। আরও মারাত্মক ক্ষেত্রে, এই সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। তবে, খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ প্রাণঘাতী হয়। এসব লক্ষণগুলো ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) বা সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর, যা কোভিড-১৯ এর চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। এ কারণেই কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে নেয়া দরকার। এটি মনে রাখা প্রয়োজন যে, মূল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো একই রকম। এর মধ্যে রয়েছে বার বার হাত ধোয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যেমন, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে ঢেকে নেয়া বা টিস্যু ব্যবহার করা, তারপর টিস্যুটি নিকটবর্তী বন্ধ ময়লার বাক্সে ফেলে দেয়া। এছাড়াও, জ্বরের জন্য একটি টিকা রয়েছে। তাই, নিজেকে এবং নিজের সন্তানকে সময়মতো ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা মনে রাখবেন।

সংক্রমণের ঝুঁকি আমি কীভাবে এড়াতে পারি?

সংক্রমণ এড়াতে আপনি এবং আপনার পরিবার নিচের চার ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:


হাত ধোয়া
ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে বা অ্যালকোহলযু্ক্ত হাত-ধোয়ার সামগ্রী ব্যবহার করে আপনার হাত ধূয়ে নিন
হাত ধোয়া
কাশি বা হাঁচি দেবার সময় মুখ এবং নাক কনুই দিয়ে বা টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখুন। ব্যবহূত টিস্যুটি তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন
হাত ধোয়া
ঠান্ডা লেগেছে বা জ্বরের লক্ষণ আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন
হাত ধোয়া
আপনার বা আপনার সন্তানের জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিন
আমার কি মেডিক্যাল মাস্ক পরা উচিত?

যদি আপনার শ্বাসকষ্টের লক্ষণ (কাশি বা হাঁচি) থাকে, তবে অন্যের সুরক্ষার জন্য একটি মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি আপনার কোন লক্ষণ না থাকে, তবে মাস্ক পরার কোন প্রয়োজন নেই। যদি মাস্ক পরা হয় তবে ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই এর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারের পর এগুলো যথাযথভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে। তবে শুধুমাত্র মাস্কের ব্যবহার এই ভাইরাসের সংক্রমন রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। এর সাথে অবশ্যই ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাঁচি ও কাশি ঢেকে রাখা, এবং ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু-এর মতো লক্ষণ রয়েছে (কাশি, হাঁচি, জ্বর) এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।

কোভিড-১৯ কি শিশুদের প্রভাবিত করে?

এটি একটি নতুন ধরনের ভাইরাস এবং ভাইরাসটি শিশু বা গর্ভবতী মায়েদের কীভাবে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, যে কোন বয়সের মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমনের ঘটনা তুলনামূলকভাবে খুব কম ঘটেছে। এখন পর্যন্ত বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রেই এই ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

যদি আমার সন্তানের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে কি করা উচিত?

যদি আপনার শিশুর কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয় তখন আপনি অবশ্যই চিকিৎসা সেবা নিবেন। তবে মনে রাখতে হবে যে, উত্তর গোলার্ধ্বে এখন জ্বরের মৌসুম, এবং কোভিড-১৯ এর লক্ষণ যেমন, কাশি বা জ্বর, ফ্লু’র মত একই রকমের হতে পারে বা সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের বিষয়টিও খুবই স্বাভাবিক। ভালভাবে হাত ধোয়া এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার। যেসব ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে, দৈনন্দিন হাত ধোয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সন্তানকে ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে সেগুলো থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে পারবেন। আপনার বা আপনার সন্তানের যদি ফ্লু’র মতো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অন্যান্য সংক্রমন থাকে, তবে দ্রুত স্বাস্থ্য সেবা নিন। এছাড়াও, অন্যদের মধ্যে এই সংক্রমন ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য জনসমাগমস্থলে (কম©ক্ষেত্র, বিদ্যালয়, গণপরিবহন) যাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

পরিবারের কোনও সদস্যের এই লক্ষণ দেখা দিলে কী করা উচিত?

আপনার বা আপনার সন্তানের যদি জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে এমন কোনও এলাকা যদি আপনি ভ্রমণ করে থাকেন, বা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে এমন কোনও এলাকা ভ্রমণ করেছে ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার লক্ষণ রয়েছে এমন কারও সাথে যদি আপনার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়, তবে আগে থেকেই স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর সাথে কথা বলুন।